প্রাথমিকভাবে আক্বিদা নিয়ে পড়াশুনা করতে যেয়ে আমি যা কিছু শিখেছি, তার একটি তালিকার সঙ্কলন করেছি। শায়েখ নূহের একজন শিষ্য, যিনি নিজেও একজন আক্বিদার আলিম এবং ফকিহ—তার কাছ থেকে আমি এগুলো শিখেছি। আলোচনাকে আর দীর্ঘ না করে, আমি যা শিখেছি তা বলা শুরু করি।
- আপনি যদি কোনো মানুষের চরিত্র সম্পর্কে জানতে চান, তবে তার স্ত্রীকে তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করুন। লোকে হয়তো একজন মানুষকে বাহ্যিকভাবে দেখে মহান ভাবতে পারে; কিন্তু একমাত্র তার স্ত্রী-ই বলতে পারবেন, তিনি আদতে কেমন মানুষ। রাসূল মুহাম্মদ ﷺ এর নবুওয়্যাত প্রাপ্তির অনেক বড়ো একটি প্রমাণ হচ্ছে, নবীজির জীবদ্দশায় তার এগারোজন স্ত্রী ছিলেন এবং তারা প্রত্যেকে পূর্ণ ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন।
- মানব সম্প্রদায় কখনোই স্থিতিশীল নয়। তারা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। কেউ-ই রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে যায় না। একজন মানুষ ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যায়, নতুবা অবনতির দিকে পা বাড়ায়। আপনাকে এটা নিশ্চিত হতে হবে যে, প্রতিদিন আপনি নিজেকে উত্তরোত্তর উন্নত করছেন; অবনতির দিকে পা বাড়াবেন না। আপনি যদি কেবল ফরজ সালাতটুকু পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তবে সুন্নাত সালাত পড়ার অভ্যাস করা শুরু করুন। আর আপনি যদি ইতিমধ্যে সুন্নাত সালাতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তবে সালাতের খুশুখুজু বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী হন, কিংবা নফল সালাত পড়া শুরু করুন।
- আল্লাহর ক্ষমাশীলতার প্রতি আশাবাদী হওয়া এবং তার শাস্তিকে ভয় করা- ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যে আমাদের এই দুটো ডানার প্রয়োজন। কেউ যদি মাত্রাতিরিক্ত আশাবাদী হয়ে ওঠে, তবে সে আত্মতুষ্টিতে ভোগা শুরু করবে। এভাবে তারা আল্লাহর বিধি-বিধানকে অবজ্ঞা করবে, যা ইচ্ছা- তা করতে থাকবে, আর দিনশেষে চিন্তা করবে আল্লাহ তো ক্ষমাশীল। আবার কেউ যদি অতিরিক্ত ভীত হয়ে থাকে, তবে সে হাল ছেড়ে দিবে। তারা অবধারিতভাবে গুনাহ করবে, যেমনটা প্রত্যেক মানুষের দ্বারা-ই হয়ে থাকে, কিন্তু নিজেকে উন্নত করার সমস্ত প্রেরণা হারিয়ে ফেলবে।
- একজন মুমিন বান্দা আল্লাহর ক্ষমাশীলতার প্রতি পরম আস্থাশীল, আবার একইসাথে তার শাস্তির প্রতি ভীত থাকবে। সে নিজেকে এমনভাবে বুঝাবে যে— ‘যদি একজন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সকলের জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ হয়, তবে সেই একজন ব্যক্তি হব আমি। আবার যদি একজন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সকলকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়, তবে এই একজন ব্যক্তি হব আমি।’
- ভালো কিংবা মন্দ যা-ই করি না কেনো, আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর নিকট। যখন আমরা কোনো ভালো কাজ করব, তখন আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ দিব; আলহামদুলিল্লাহ বলব। আবার যখন আমরা কোনো ভুল কাজ করব, তখন আমরা আল্লাহর কাছে ফেরত আসব। ইস্তেগফার করব বা তওবা করব ।
- প্রত্যেকের উচিৎ নিজ নিজ ঈমান-আমলকে আরও পরিশুদ্ধ করার চেষ্টায় রত থাকা। নিজের ত্রুটির ব্যাপারে তটস্থ থাকা উচিৎ। আয়েশা রাঃ বলেন—কেবল একজন মুনাফিক ব্যক্তিই নিজেকে মুনাফিক বলে মনে করে না।
- প্রতিনিয়ত আপনি আপনার পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে যুদ্ধ করে চলেছেন। আপনার আত্মা বা রুহের সাথে আপনার প্রবৃত্তি বা নফসের যুদ্ধ ততক্ষণ চলতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো একপক্ষ হেরে যায়। যদি আপনার আত্মা হার মেনে নেয়, তবে দুনিয়াবি চাওয়া-পাওয়া আপনার ওপর রাজত্ব করা শুরু করবে। আর যদি নফস হার মানে, তাহলে পার্থিব আশাগুলো চিরতরে বিদায় নিবে। সুতরাং, যতদিন বেঁচে থাকবেন, নিজের প্রবৃত্তির সাথে যুদ্ধ করতে থাকুন।
- সঠিক পথে থাকার নিদর্শন হচ্ছে, আত্ম-সচেতনতা, কৃতকর্মকে পুনঃবিবেচনা করা এবং নিজেকে কাজের মাঝে নিমগ্ন রাখা। এর প্রমাণ হলো অনুশোচনা করা এবং সর্বদা অন্যের ভালো দিকগুলোর কথা চিন্তা করা। আমরা যদি নিজেদেরকে এমন অবস্থানে খুঁজে পাই, যেখানে আমরা আমাদের প্রতিটি কাজের পেছনে অজুহাত খুঁজে বেড়াচ্ছি, নিজের গুনাহের জন্য অনুশোচনা করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি বা অন্যের অপকার করার কথা চিন্তা করছি- তাহলে আমাদের পরিবর্তিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
- ধার্মিক মানুষদের একটা দিক হলো, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গোষ্ঠীভুক্ত বা স্বতন্ত্র থাকার মানসিকতা পোষণ করে থাকেন। ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের ব্যাপারে বলতে গেলে, তাদের কাছে জীবনের কোনো নির্দিষ্ট অর্থ বা উদ্দেশ্য নেই। আমাদের জন্যে যে অবধারিত মৃত্যু অপেক্ষা করছে, তার পরের জীবন সম্পর্কে তারা একেবারেই গাফেল। জীবনের এই অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে জানার স্পৃহা থাকতে হবে। যারা এখনও সঠিক পথ নির্দেশনা পায়নি, তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে হবে। তাদের প্রতি দাম্ভিক বা উদ্ধত আচরণ করা যাবে না।
- স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং নির্ধারিত নিয়তি নিয়ে অনেক দার্শনিক তর্ক-বিতর্ক ও আলাপ জারি আছে। প্রকৃতপক্ষে, এটা এমন একটি ব্যাপার, যা কেবল আত্মিকভাবেই বুঝা সম্ভব। ব্যাপারটি সহজে বোঝার জন্যে প্রথমে আমাদেরকে লক্ষ করতে হবে। একটি পূর্বনির্ধারিত ঘটনায় অন্যদের প্রতিক্রিয়ার সাথে নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় কৃত একটি কাজ সংঘটিত হওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়া খেয়াল করতে হবে। এভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে একজন খুব সহজেই অন্যের কৃতকর্মের প্রতি রাগান্বিত হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবে।
- সবসময় অপর মুসলিম সম্পর্কে সর্বোৎকৃষ্ট ধারণা পোষণ করতে হবে। একজন অবিশ্বাসী বা কাফের ব্যক্তির ন্যায় মানুষকে দোষারোপ করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠা চলবে না। অপরের কৃত ভুলের পেছনের কারণটি বোঝার চেষ্টা করুন। আর যারা মানুষের ভুল-ত্রুটিগুলো দেখেও না দেখার ভান করে যান, তাদের এমনটি করার পেছনের বিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতাকে স্বাগত জানানোর মানসিকতা রাখুন।
- অনেক সময় সমাজে ঘটতে থাকা অন্যায়-অবিচার দেখে মানুষ নিরাশ হয়ে পড়ে, আর এভাবে তারা নিজেদেরকে পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তাকেও তুচ্ছজ্ঞান করে। আমরা রাজনৈতিক কাঠপুতুল নই। তবে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, আমরা যদি সমাজের মাঝে পরিবর্তন আনতে চাই, তবে সবার প্রথমে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে।
- অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। এটা কেবল দাম্ভিকতাকেই প্রশ্রয় দেয় আর তাদেরকে আরও বেশি রক্ষণশীল করে তোলে। আপনি যদি একজন অমুসলিমের সাথে ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করতে যান, তবে তার প্রতি বিনীত আচরণ করুন। তাদের বিশ্বাসের মধ্যকার ত্রুটিগুলো নম্রভাবে ধরিয়ে দিন। উত্তম আখলাক সম্পন্ন ব্যাক্তির মাধ্যমে মানুষ ইসলামের প্রতি অধিক আকর্ষিত হয়। একজন তুখোড় বিতার্কিক বা পন্ডিত ব্যাক্তি তর্কযুদ্ধে একজনকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু তা কখনোই অপরপক্ষকে ইসলামের দিকে আকর্ষিত করবে না। আমার শিক্ষক বিষয়টিকে আরও স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘খ্রিষ্টানদের ত্রিত্ববাদকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করো না। প্রকৃতপক্ষে, কেউ-ই এই ব্যাপারটিকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে না।’
ইসলামের শুরুতে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদত করাটাই স্বাভাবিক বিষয় ছিল। ধীরেধীরে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছিল এবং সেই সময়ে ‘সুফিবাদ’ কথাটির আবির্ভাব হওয়াটা জরুরি হয়ে উঠেছিল। এর দ্বারা কেবল এতটুকুই বোঝায় যে, আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর পদ্ধতিতে ইহসান (পরিপূর্ণতা বা সৌন্দর্য) এর উপস্থিতি রাখা। জীবনের প্রতিটি অংশে ইহসানের ব্যবহার করা।
দিদার মোহাম্মদ
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ - ০১:৩৮ পূর্বাহ্নভালো লাগল...অনেক কিছু জানলাম..শিখলাম
Scoulse
২১ ডিসেম্বর, ২০২০ - ১৮:০০ অপরাহ্নOsu Propecia Acheter haillHactnal <a href=https://bansocialism.com/>buy cialis online us</a> Idelasah Cephalexin Overdose
আবদুল কাদের
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ - ১২:১০ অপরাহ্নসুন্দর হয়েছে। তবে কুরআন ও হাদীসের রেফারেনস দিলে আরো ভাল হত। যদি থাকে তাহলে দিবেন।
আবদুল কাদের
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ - ১২:২৪ অপরাহ্নসুন্দর হয়েছে। তবে কুরআন ও হাদীসের রেফারেনস দিলে আরো ভাল হত। যদি থাকে তাহলে দিবেন।
মুহাম্মদ মাজেদ
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ - ০৫:০০ পূর্বাহ্নঅনেক ভালো মানের একটা টপিক।
রফিক
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ - ১৬:৩৪ অপরাহ্নখুব ভাল আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস প্রদান করুক
Abdullah
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ - ০১:১৪ পূর্বাহ্নExcellent thinking for islam
Md Jobayer Islam
০৫ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৯:০৪ অপরাহ্নVery good article. But heading is 14 lessons & there are 13 points in detail article. am I missing any described point?